দুর্দিনের ছাত্রলীগ নেতা সোহেলের বিরুদ্ধে এখনো সক্রিয় ল্যাংড়া খালেদের ক্যাডাররা

১৯৯৫ সালে কিশোর বয়সেই শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সোহেল শাহরিয়ার। ১৯৯৭ সালে হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক হন। ২০০২ সালে মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ১২টির বেশি মিথ্যা মাম’লায় জেল খেটেছেন বহুবার। বিএনপি জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বহু হা’মলা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মাসের পর মাস জেলেই নয়, বাড়ি থেকেও পালিয়ে থেকেছেন সোহেল শাহরিয়ার। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মাম’লার আ’সামি হয়েছিলেন।

শুধু সোহেল শাহরিয়ারই নয়, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কারণে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও নির্মম হা’মলা এবং অত্যা’চারের শিকার হতে হয়েছিল। অথচ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় যেন আরো ভয়ংকর বিপাকে পড়ে যান সোহেল শাহরিয়ার ও তাঁর পরিবার। শেখ হাসিনাকে হ’ত্যা চেষ্টার মাম’লার আ’সামি ফ্রিডম পার্টির নেতা দুর্ধর্ষ সন্ত্রা’সী খালেদ মাহমুদ ভুইয়া ওরফে ল্যাংড়া খালেদ ও শীর্ষ সন্ত্রা’সী জাফর আহমেদ মানিকের সন্ত্রা’সী বাহিনীর কাছে ধীরে ধীরে অসহায় হয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার।

মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের পৃষ্টপোষকতা পেয়ে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বনে যান ফ্রিডম পার্টির লেংড়া খালেদ। এরপর বেপরোয়া খালেদ ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ারকে রাজনীতির মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে একের পর এক সোহেলের ওপর হা’মলা করে এবং প্রাণে মে’রে ফে’লার চেষ্টা চালায়। এমনকি তাঁর সোহেলের বৃদ্ধ মাকে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে যেন সোহেল দেশে থাকলে মে’রে ফেলা হবে। একাধিকবার থানায় গিয়ে মাম’লা করতে চাইলেও খালেদ গংদের বিরুদ্ধে মাম’লা নেয়নি, একটি জিডি পর্যন্ত করার সুযোগ পায়নি। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে লেংড়া খালেদ তাঁর সন্ত্রা’সীদের ভয়ে ২০১১ সালে দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যান। মহানগর দক্ষিণে চলে সম্রাট-খালেদ-আরমানদের ক্ষমতার দাপট, সন্ত্রা’সের আধিপত্য।

শুধু সোহেল শাহরিয়ারই নয়, ল্যাংড়া খালেদ ও তাঁর ক্যা’ডারদের হা’মলা এবং নির্যাতনের ভয়ে জামায়াত বিএনপির আমলে নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ যুবলীগের ত্যাগী নেতারা এলাকা ছাড়া হয়। সন্ত্রা’সী এবং মাদক ব্যবসায়ীদেও নিয়ে এলাকায় চালানো হয় ত্রাসের রাজত্ব।

সোহেলের বৃদ্ধ মা ও একমাত্র বোন ছিলেন ঢাকার বাসাবো এলাকায়। সেখানেও মা এবং বোনকে থাকতে দেয়নি খালেদ। সন্ত্রা’সীরা বাড়িতে গিয়ে সোহেলের বৃদ্ধ মাকে শাসিয়ে আসে যেন সোহেল এলাকা ছেড়ে দেয়। বার বার হুমকি দেয়, সোহেল দেশে আসলে লাশ দেখতে হবে। আর সোহেলের একমাত্র ছোট বোনটি লেখাপড়া করতো হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে। সেই বোনটিকে কলেজে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। এমনকি সুদূর কানাডা থেকে মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে দেশে ফেরত আসতে চাইলে বার বার হুমকি দিতে থাকে ফোনে।

সোহেল এখন কানাডা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফরের সময় দলের নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সোহেল শাহরিয়ারের সঙ্গে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে খুলে বলেন তাঁর কানাডা প্রবাসী হওয়ার নির্মম কাহিনী। সোহলের ওপর ঘটে যাওয়া এমন অমানবিক ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হন শেখ হাসিনাও। সোহেলকে স্বপরিবারে দেশে ফেরত আসার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযানের পর ল্যাংড়া খালেদ, সম্রাট, জিকে শামীম, আরমান গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি কাজ করে। সারাদেশের মানুষের ন্যায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ারও স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে আসবেন, আবার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হবেন। কানাডা থেকে পরিবার নিয়ে সম্প্রতি দেশেও ফেরত আসেন। কিন্তু দেশে ফেরত আসলেও এলাকায় যেতে পারছে না সোহেল শাহরিয়ার। কারণ ল্যাংড়া খালেদ আর সম্রাট গ্রেপ্তার হলেও ফ্রিডম পার্টির মানিক ও খালেদের সন্ত্রা’সী বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়ে সোহেল শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোহেল শাহরিয়ার বলেন, ‘কিশোরকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ এবং শেখ রাসেল সংগঠন করি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ২০০২ সালে মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে জামায়াত বিএনপির ভয়ংকর নির্যাতনসহ অসংখ্য মাম’লার আ’সামি হয়ে জেল খেটেছি। কিন্তু ল্যাংড়া খালেদদের কারণে দেশ ছাড়া ছিলাম, মায়ের লাশটিও ওরা দেখতে দেয়নি। কত নেতার কাছে আকুতি করেছি, কেউ খালেদের বিষয়ে কথা বলতে চায়নি। শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর দেশে ফেরত আসলেও খালেদের সন্ত্রা’সীরা এখনও হুমকি দিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে আমার নামে। বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল সংবাদও করানো হচ্ছে। আমি দলের নেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি মমতাময়ী মায়ের মতো, তিনি সবকিছু জানেন।